নেকবর হোসেন, কুমিল্লা।। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এমন তিন শতাধিক মানুষকে সম্মানের সাথে শেষ বিদায় দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিবেক। ৩১জুলাই দুপুর পর্যন্ত গত ১৬ মাসে কুমিল্লায় ৩২৬ জনের লাশ দাফন করেছে মানবিক এ সংগঠন।
সংগঠনের সূত্রমতে, গতবছর ৩০ মার্চ প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিবেক। শুরুতে করোনা সচেতনতা, মাস্ক বিতরণ, করোনা রোগীদের বাসা বাড়িতে খাদ্য, ঔষধ ও ফলমূল পৌঁছে দেন সংগঠনের সদস্যরা। একই বছর ১৮ মে করোনায় মৃত্যু একজন ব্যাংক কর্মকর্তার জানাযা ও দাফন করে বিবেক সংগঠন। ১১ সদস্যের টিম এ পর্যন্ত ৩২৬ জনের লাশ দাফন করেছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ১৩নং ওয়ের্ডের বাসিন্দা কাউছার হোসেন জানান,বিবেক নামের যথার্থতার পরিচয় ইতিমধ্যেই কুমিল্লার মানুষ পেয়ে গেছেন, গতবছর করোনার প্রথম ধাপ যখন শুরু হলো তখন মা বাবা কে করোনার ভয়ে রাস্তায় ফেলে যেতো,ভাই বোন কে, ভাই ভাই কে স্বামী স্ত্রী কে ও ফেলে যেতো কখনো রাস্তায় তাদের মৃত্যু হতো আবার কারো কপালে জুটতো না হাসপাতালের চিকিৎসা, কেউ সুস্থ হয়ে একা বাড়ি ফিরতেন আবার কারো ভাগ্যে জুটতো মৃত্যু! মারা যাবার পর কেউ তাদের লাশও গ্রহণ করতে আসতেন না আর বেওয়ারিশ হিসাবে তাদের লাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম মাটি দিতো। কিন্তু আস্তে আস্তে করোনা আক্রান্তদের প্রতি অবহেলা বেড়ে গেলো সাথে মৃত্যুর হারও। সারা দেশে যখন এই চিত্র শুরু হলো আর তখন এই কুমিল্লায় সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। এ সময় এই ইউসুফ মোল্লা টিপু ১১ জনকে নিয়ে হাজির হয়ে যান ওই মৃত ব্যক্তির কাছে সম্ভবত ২০২০ সালের মে মাসের ১৮ বা ১৯ তারিখ হবে সেই থেকে শুরু বিবেকের যাত্রা যা আজ ও অব্যাহত আছে।
৩১শে জুলাই ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ৩২৬ টি মরদেহের দাফন ও সৎকার কাজ শেষ করেছে বিবেক। বিবেক শুধু একটি সংঘটন এই নয় বিবেক এখন মানুষের জীবনের শেষ ঠিকানায় পৌছানো একটি নাম। হাসপাতাল থেকে মরদেহ নামিয়ে আনা গোসল দেয়া জানাজা দিয়ে দাফন শেষ করেই তারা তাদের গন্তব্যে ফিরে যায়। আমরা বিবেকের চেয়ারম্যান ইউসুফ মোল্লা টিপু সহ তার টিমের সকল সদস্যদের ও তাদের পরিবারের সবার সুস্থতা ও মংগল কামনা করি,দোয়া করি আল্লাহপাক তাদের কে নেক হায়াত দান করুক,পাশাপাশি আমরা মনে করি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে বিবেক থাকা প্রয়োজন।
তাদের আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ।
এ বিষয়ে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মোশাররাফ হোসাইন বলেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মৃত মুসলিম ব্যক্তির জানাযায় ঈমান সহকারে ও ছাওয়াবের আশায় শরিক হয় এবং জানাযা ও দাফন পর্যন্ত থাকে, ওই ব্যক্তি দুই কিরাত নেকি পাবে। আর প্রতি কিরাত হচ্ছে ওহুদ পাহাড়ের সমান। আর জানাযা পড়ে দাফনের পূর্বে ফিরে যাবে সে এক কিরাত নেকি নিয়ে ফিরবে। মানবিক সংগঠন বিবেক জানাযা ও দাফন কার্যক্রমে যে উদাহরণ তৈরি করেছে তা আল্লাহ যথাযথ বিনিময় প্রদান করবেন।
মানবিক সংগঠন বিবেক এর প্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, করোনা মহামারিতে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। যে কাজটি মরহুমের স্বজন সন্তানরা করতো, আমরাই তাদের স্বজন আমরাই তাদের সন্তান হয়ে করছি।
শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩২৬ জন মানুষকে আমরা সম্মানের সাথে শেষ বিদায় দিয়েছি। যার মধ্যে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ রয়েছেন। দাফন কার্যক্রমের পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের রোগীর জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা, অক্সিজেন প্রদান ও ঔষধ দিয়ে থাকি। এছাড়াও বেওয়ারিশ বা খুব দরিদ্র পরিবার হলে কাফনের কাপড়সহ দাফনের যাবতীয় খরচ বিবেক বহন করে থাকে।
প্র/স