প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের জবাবদিহি নিশ্চিতের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা নৃশংসতার পর এই পরিষদে কোনো প্রস্তাব এই প্রথম ভোটাভুটি ছাড়া পাস হলো। সোমবার (১২ জুলাই) প্রস্তাবটি পাস হয়।
জেনেভায় জাতিসংঘ বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন সোমবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় এই প্রথম কোনো প্রস্তাব বিনা ভোটে জাতিসংঘে গৃহীত হলো। সেই বিবেচনায় এবারের প্রস্তাবটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলতি অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সব সদস্যরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা, মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য শুরু থেকেই প্রস্তাবের বিভিন্ন বিষয়ে পরিষদের সদস্যদেশগুলো মতবিরোধে পড়ে যায়। তবে শেষপর্যন্ত নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সোমবার গৃহীত হলো।
ওআইসির ওই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এ ছাড়া তাদের প্রত্যাবাসনের আগপর্যন্ত এ গুরুভার বহনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহাতভাবে মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গৃহীত এই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সব ধরনের নির্যাতন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা নীপিড়ন ও বিতাড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান বিচারপ্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়েছে এই প্রস্তাবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সব প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
প্রস্তাবে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে মিয়ানমারবিষয়ক ‘নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধান মিশনের’ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর মানবাধিকার পরিষদ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতিবেদন উপস্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়। তা ছাড়া এ প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ‘রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ’ বিষয়ে মানবাধিকার পরিষদে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমানা উন্মুক্ত করে দেন। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে গত চার বছরেও মিয়ানমারের অসহযোগিতা ও অনীহার কারণে অদ্যাবধি জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘের আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও তাদের মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি সক্রিয় আলোচনায় রাখা জরুরি। শুধু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বসম্প্রদায়ের রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোযোগ হারানো উচিত হবে না। তিনি বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।